নাইম আইটি
https://www.nayemit.com/2022/03/shab-e-barat-namaz.html
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় জানতে চাইলে আমাদের পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন।
আজ মুসলিম উম্মাহ’র পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত। বিশ্ব মুসলিমবাসীর বিশ্বাস, এ রাতে অসংখ্য বান্দা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়া লাভ করে থাকে। এ কারণে এ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘অব্যাহতি/ মুক্তির রজনী’ বলা হয়।
হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ রজনী সম্পর্কে বলেছেন, এই রাত্রিতে এবাদতকারীদের গুণাহরাশি আল্লাহ তালা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।
শবে বরাত ২০২২ কবে হবে?
শবে বরাত ২০২২ আগামী ১৮ই মার্চ ২০২২ ইং তারিখে হবে। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ রোজ শুক্রবার দিবাগত রাতে শবে বরাত হবে। অন্যদিকে শবে বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি আগামী ১৯ মার্চ ২০২২ ইং তারিখে দেওয়া হয়েছে।
শবে বরাত ১৮ মার্চ ২০২২ তারিখে হবে। অর্থাৎ আপনি ১৮ তারিখ মাগরিবের পর থেকে শবে বরাতের ইবাদত বন্দেগী করতে পারবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।
এই দিনে রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামায পড়া উত্তম। শবে বরাতের ৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম হলঃ
১. প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে।
২. দু'রাকাত নামাজ শেষ করে সূরা ইয়াসিন বা সূরা ইখলাস ২১ বার তিলাওয়াত করতে হবে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
আরবি নিয়ত হলোঃ নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে পড়বেনঃ ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’। বাংলা ভাষায় আরবি উচ্চারণের ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হতে পারে। ফলে যারা আরবি পারেন তাদেরকে আরবিতেই নিয়ম করার অনুরোধ করবো।
নামাজের নিয়ত বাংলাতেও পড়া যাবে। এমনকি আপনি যদি মসজিদে নামাজ পড়েন তাহলে "ইমাম যা করছে আমিও তাই করছি" এটা বললেও নামাজ হবে (রেফারেন্স - আল্লামা মাহমুদুল হাসান, প্রিন্সিপাল, যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা)।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম | শবে বরাতের নফল নামাজ
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "মানুষকে বিচার করা হবে তার নিয়ত দ্বারা।" তাই নামাজের নিয়ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে - নিয়তেই বরকত।
আপনি যে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়েছেন মনে মনে সেই সিদ্ধান্ত পোষণ করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে। আরবি বা বাংলা যে কোন ভাষাতেই নিয়ত করতে পারেন।
বাংলায় নিয়ম করা নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন। এবার তাহলে চলুন শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নফল নামাজ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
২ রাকাত তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ
দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পড়ার নিয়ম হলো প্রতি রাকাতে আলহামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা ইখলাস)।
এই নামাযের ফজিলত: প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকি লেখা হবে।
২ রাকাত নফল নামাজ
দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম - উপরে বর্ণিত নামাজের মত। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা ইখলাস, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ পড়বেন।
এই নামাযের ফজিলত: রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের সুযোগ পাওয়া যাবে।
৮ রাকাত নফল নামাজ
আট রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে। শবে বরাতের আট রাকাত নফল নামাজের নিয়ম হলো প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা ইখলাস ৫ বার করে পড়বেন। একই নিয়মে বাকি সব রাকাত আদায় করবেন।
এই নামাযের ফজিলত: গুনাহ থেকে মুক্তি পাবেন, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে।
১২ রাকাত নফল নামাজ
১২ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়বেন। শবে বরাতের বার রাকাত নফল নামাজের নিয়ম হলো প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কালেমা তওহীদ, ১০ বার কলেমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ পড়বেন।
১৪ রাকাত নফল নামাজ
১৪ রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে এবং নিয়ম হলো প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন।
এই নামাযের ফজিলত হলোঃ যে কোনো দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।
৪ রাকাত নফল নামাজ এক সালামে
শবে বরাতের চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে। শবে বরাতের চার রাকাত নফল নামাজের নিয়ম হলো প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ।
এই নামাজের ফজিলতঃ গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
৮ রাকাত নফল নামাজ এক সালামে
আট রাকাত নফল নামাজ এক সালামে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাস।
এই নামাজের ফজিলতঃ এর ফজিলতে সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হযরত ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা এরশাদ করেছেন, "আমি ওই নামাজ আদায় কারীর সাফায়াত করা ব্যতীত জান্নাতে কদম রাখব না।"
শবে বরাতের দোয়া | শবে বরাতের সর্তকতা
শবে বরাতের দোয়া এর ব্যাপারে হাদিসে নির্দিষ্ট কোন দোয়া উল্লেখ করা নেই। তাই শবে বরাতের দোয়া আপনাদের মত করে দোয়া পাঠ করতে পারবেন। তবে আপনারা চাইলে এই দোয়াটি পড়তে পারেন।
رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ
বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)।
নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না সাবধান এ যেন না হয়। ভাল হয় শবে বরাতের নফল শেষ করে বিতরের নামাজ পড়ে এর পর ফজর পড়া। যাই করেন নামাজ পড়েন আর ঘুমান সমস্যা নেই, ঠিক সময় মত উঠে ফজর নামাজ যেন পড়তে পারেন সেই দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মুসলিম ভাই-বোনেরা সারারাত জেগে নামাজ আদায় করবেন। আত্মীয়-পরিবার-দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করবেন। আল্লাহর দরবারে দুহাত উঁচিয়ে বিশ্ববাসীর জন্য শান্তি প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ্ সব বান্দার দোয়া কবুল করুন, আমিন।
0 জন কমেন্ট করেছেন
Please read our Comment Policy before commenting.