জমির দলিল বের করার নিয়ম ২০২৫
আপনি কি আপনার জমির দলিল বের করার নিয়ম? জমির দলিল সহ খুটিনাটি সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন?
তবে আর্টিকেলটি পড়ুন কারন এখানে আপনার সকল সমস্যার সমাধান দেয়া রয়েছে। এখান থেকে জানতে পারবেন জমির দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে।
জমির দলিল বের করার নিয়ম
জমি নিয়ে বিরোধ সংক্রান্ত ঝামেলা প্রায়ই আমাদের পাশেপাশে ঘটছে। সেই সৃষ্টির শুরুর থেকে চলমান, নিজ জমি দখলে রাখা বা সীমানা নির্ধারণ নিয়ে গন্ডগোল৷ আর সমস্যা আরও বেশি বৃদ্ধি পায় যখন দলিল পাওয়া না যায়।
বর্তমান সময়ে জমি সম্পর্কিত মামলা, নানাবিধ অভিযোগ ও দেশকে ডিজিটালাইজ করার পদক্ষেপের জন্য জমির দলিল প্রাপ্তির জন্য পুরাতন পদ্ধতির পাশাপাশি নতুন রুপে ডিজিটাল পদ্ধতিতেও জমির দলিল পাওয়ার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে জমির দলিল বের করার নিয়ম বলার পাশাপাশি যেকোনো জমির মালিকানা খুজে পেতে কি কি করনীয় সেই সকল নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।
তবে শুরু করা যাক গুরুত্বপুর্ন বিষয় নিয়ে উক্ত আর্টিকেলটি তবে প্রথমেই জমির দলিল সম্পর্কিত প্রাথমিক যে তথ্য তা দিয়ে নেয়া যাক।
জমির দলিল কি? এবং এর প্রয়োজনীয়তা
একটি নির্দিষ্ট জায়গা সম্পর্কিত তথ্যের সমষ্টিই হচ্ছে জমির দলিল। প্রতিটি জমির দাগ নম্বর থাকে। নির্দিষ্ট দাগ নম্বরে, মৌজায় একটি ভুখন্ডের বিষয়ে কর, খাজনা, ক্রয়-বিক্রয়, ওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর ইত্যাদি বিষয় যে কাগজে সরকারি Stamp এবং সরকারি রেকর্ড পাবার দলিলটি হলো জমির দলিল৷
যার কারনে কেবলমাত্র জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজটি দলিল নয় বরং জমি সম্পর্কিত অন্যান্য যে কোন কাগজপত্র দলিল হিসবে গণ্য। তাই নতুন করে যদি কোনো জমি ক্রয় করতে যান তবে অবশ্যই জমির মূল কাগজের পাশাপাশি অন্যান্য কাগজ গুলোও দেখে নিবেন।
জমির দলিলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জমির দলিলের মাধ্যমেই ব্যক্তির জমি সম্পর্কিত মালিকানা নির্ধারণ হয়৷ প্রকৃত মালিকের কাছে জমির দলিল থাকা খুবই প্রয়োজনীয়৷ অন্যথায় প্রকৃত মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও জমি বেদখল হয়ে যেতে পারে৷ কেননা, জমির দলিলে যার নাম থাকে, জমি তার বলেই গণ্য হয়।
এজন্য পারিবারিক বন্টননামা করার পরপরই রেজিষ্ট্রি করে যার যার জমির দলিল তার নিকট হস্তান্তর করা গুরুত্বপুর্ন। তাছাড়া জমি ক্রয় করার ক্ষেত্রেও আসল জমির দলিল দেখে ক্রয় করতে হয়। কোন কারনে ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল না পাওয়া গেলে সর্বশেষ খাজনা পরিশোধ ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে নিতে হবে। নাহলে ভুয়া জমি ক্রয়ের শিকার হবার সম্ভাবনা থাকে ও জেল, জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়।
জমির দলিলের প্রকারভেদ
ইতিমধ্যে জমির দলিল ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনেছি এই পর্যায়ে জমি কত ধরনের হয়ে থাকে তা জানবো। আমরা জানি যে, জমির দলিল কেবল ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজটি কেবল নয়। দলিল হিসেবে গণ্য হয় অন্যান্য ডকুমেন্টসও। সেই কাগজ গুলো হচ্ছে -
খতিয়ান
আমরা অনেকেই হয়তো খতিয়ান শব্দটি শুনেছি, বিশেষ করে যারা ব্যবসা বিভাগে অধ্যায়ন করেছে তারা। তবে এটি অংকের খতিয়ান নয়, এটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত জমির মালিকানা/দাগের বর্ণনাসহ প্রস্তুতকৃত নথিচিত্র৷ মূলত খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় জমির প্রকৃত মালিকদের নিকট থেকে সরকারি খাজনা আদায় করা নিমিত্তে৷ এই খতিয়ানকে আবার কয়েকভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে :
- সিএস খতিয়ান
- এসএ খতিয়ান
- আরএস খতিয়ান
- বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ
- পেটি খতিয়ান
- মাঠ পর্চা
মাঠ পর্চা হচ্ছে সরকার প্রদত্ত জমির মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ান৷ জমি জরিপ করার সময় জমি মালিকদের তাদের জমি সম্পর্কিত তথ্য এতে দেওয়া থাকে৷ খতিয়ান প্রকাশের আগে একে খতিয়ানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ মাঠ পর্চায় কোন ভুল থেকে থাকলে খতিয়ান প্রকাশ করার পূর্বেই সেটির সংশোধন করতে হবে।
অনলাইনে খতিয়ান দলিল বের করার পদ্ধতি
আপনি জেনে খুশি হএন যে বর্তমানে জমির দলিল বের করার জন্য ভূমি অফিসে গিয়ে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতে হবে না। ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমেই তা করা যাবে জমির দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে যা যা করতে হবে তা নিম্মে ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলোঃ
১) অনলাইনে খতিয়ান বের করতে প্রথমেই এখানে ই-পর্চা ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে যেকোনো ব্রাউজার দিয়ে। উক্ত কাজটি মোবাইলের মাধ্যমেও করা যাবে। ব্রাউজারে লিখে গো দিতে হবে বা সার্চ করতে হবে।
২) এখানে এসে বিভাগ সিলেক্ট করতে হবে। এরপর জেলা, অতপর উপজেলা এবং সর্বশেষে মৌজা বাছাই করে নিতে হবে (তবে তার আগে আপনার জমির জরিপ ধরণ অনুযায়ী BS, CS, BRS, RS, SA এর মধ্যে যা হবে তা সিলেক্ট করে দিন)
৩) বর্তমানে প্রচলিত ৪ ধরনের খতিয়ান থেকে একটি যাচাই করে নিতে হবে এই পর্যায়ে। খতিয়ান কত ধরনের সেটা ইতিমধ্যে উল্লেখিত রয়েছে। আপনার খতিয়ান সিলেক্ট হয়ে গেলে নিম্মে দেয়া ৪ টি অপশন পাবেন যা পূরণ করতে হবে।
- খতিয়ান নং অনুযায়ী
- দাগ নং অনুযায়ী
- মালিকানা নাম অনুযায়ী
- পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী
৪টি অপশনের মধ্যে যে অপশনের তথ্য আপনার নিকট রয়েছে সেই অপশনের বাম পাশের গোল ঘরে মাউস দিয়ে ক্লিক করে ফেলুন। গোল ঘরে সিলেক্ট করলে তার নিচেই আরেকটি বক্স দেখা যাবে যা পূরন করতে হবে ঠিক ভাবে।
৪) এবার একটি ম্যাথ ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। যার মানে এই যে দুই সংখ্যার যোগফল করতে বলা হবে।
৫) এই পর্যায়ে ‘খুজুন’ অপশনে ক্লিক করুন। আপনার অনুসন্ধানকৃত খতিয়ানটি মনিটরে বা মোবাইল স্কিনে দেখা যাবে। আর এভাবেই আপনি আপনার অনুসন্ধানকৃত আর এস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
ডাকযোগে খতিয়ান দলিল লাভের প্রক্রিয়া
তাছাড়া আরো একটি উপায় আছে জমির দলিল বের করার জন্য। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি ডাকযোগের মাধ্যমে খতিয়ান হাতে পেয়ে যাবেন। উক্ত কাজটি করতে হবে আপনার স্মার্টফোনের প্রয়োজন হবে। কাজটি করতে যা করতে হবে তা ধাপে ধাপে তুলে ধরছি
১) প্রথমেই গুগল প্লে স্ট্রোর থেকে একটি অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে যার নাম হলো eKhatian। এই পর্যায়ে অ্যাপটি ওপেন করে উপরে উল্লেখিত অনলাইন প্রসেসের মতই সেম টু সেম কাজ গুলো করে যেতে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগের প্রসেসের মতই জমির মালিকানা দেখানো হবে স্কিনে। এইবার ডাকযোগের মাধ্যমে যদি হাতে হার্ডকপির খতিয়ানটি পেতে চান তবে নিচে দেয়া আবেদন নামক অপশনে ক্লিক করুন।
২) উক্ত আবেদন ফর্মে আপনার লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে বা আপনার নিকটবর্তী ডাকঘর সিলেক্ট করতে হবে। বলে রাখা ভালো ডাকযোগে খতিয়ান আসতে সময় লাগে ৭ দিনের মত তবে আপনি যদি জরুরি অপশন সিলেক্ট করে থাকেন তবে সেটি ৩ দিনের মধ্যেই এসে পরবে।
৩) সব ঠিক থাকলে এবার মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে ৩৫ টাকা পেমেন্ট করে দিন। ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। শিগ্রই আপনার জমির খতিয়ান আপনার হাতে চলে আসবে।
অতঃপর, এই ছিলো জমির দলিল বের করার নিয়ম যেখানে অনলাইনে এবং ডাকঘরের মাধ্যমে জমির খতিয়ান তোলার সহজ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ঝামেলাহীন এ পদ্ধতিতে জমির দলিল বের করা যায় যাতে একজনের শক্তি, সময় উভয়ই সাশ্রয় হয়। তথাপি জমির মালিকানা নিয়ে যে কোন ঝামেলা, আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।
0 জন কমেন্ট করেছেন
Please read our Comment Policy before commenting.