ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয় ২০২৪
ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৃথিবীজুড়ে নেহাত কম নয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, অলসতা, জীনগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নানান কারণে একজন ব্যক্তি ডায়বেটিস এ আক্রান্ত হতে পারেন।
ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে অথবা শরীর সঠিকভাবে ইনসুলিনের ব্যবহার না করতে পারলে ডায়বেটিস বেড়ে বা কমে যায়। কিছু নিয়মনীতি পালন করে জীবনযাপন করলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সেই নিয়ম-কানুনগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে আসা যাক।
দৈনন্দিন শরীরচর্চা
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো দীর্ঘদিন কোনো শরীরচর্চা না করা। দিনে কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটা, বয়স এবং শারীরিক ক্ষমতা অনুসারে ব্যায়াম করা, সাঁতার কাঁটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি নানান ধরণের শরীরচর্চা আমাদের শরীরে ইনসুলিনের প্রবাহমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি রুটিনমাফিক শরীরচর্চা করতে বেশি ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে দিনে অল্প সময়ের জন্য হলেও হালকা ব্যায়াম করা/হাঁটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। তাছাড়াও, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা, কাছের গন্তব্যে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে যাতায়াত করা, নিজের মালামাল নিজে বহন করা ইত্যাদি কসরত করার মানসিকতা তৈরিতে সহায়তা করবে।
স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট অনুসরণ করা
আপনি কি খাছেন, কখন খাচ্ছেন, কতটুকু পরিমাণে খাচ্ছেন তা আপনার দেহে ইনসুলিনে প্রবাহমাত্রায় ব্যাপক পভাব ফেলে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, রঙিন শাক-সবজি বেশি করে খাওয়া, ভারী খাবার ও ফাস্টফুড যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা, মিষ্টি ও টক জাতীয় খাবার খুব হিসেব করে খাওয়া ইত্যদি হলো একজন ডায়বেটিস রোগীর অবশ্য পালনীয়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের জন্য সুষ্ঠু একটি ডায়েট চার্ট বানানো। আমি, আপনি, আমরা সকলেই মানুষ এবং ভারী খবারের প্রতি লোভ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, ডায়বেটিস থাকুক বা না থাকুক তেলে ভাজা খাবার অতিরিক্ত খাওয়া বা প্রতিদিনের ডায়েট এ অন্তর্ভুক্ত রাখা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আছে যা গ্রহণ করা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়বেটিস রোগীদের খাদ্যাভাস নিয়ে বিস্তারিত পড়তে এএখানে চাপুন।
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করা
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে, অতিমাত্রায় কাজের চাপ থাকলে, কোনো কারণে মানসিকভাবে বিষন্ন থাকলে অথবা মানসিক অশান্তিতে ভুগলে রক্তচাপ বেড়ে/কমে যাওয়া, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে যা ইনসুলিন প্রবাহে ও উৎপন্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই যথাসম্ভব দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত কর্মচাপ, মানসিক অশান্তিতে ভোগা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে কোনো সাইকোলজিস্ট এর সরণাপন্ন হওয়া উচিত। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া, নিজেকে সময় দেয়া ইত্যাদি দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
ধূমপান ও মদ্যপান একজন স্বাভাবিক মানুষের জন্যেও ক্ষতিকারক; ডায়বেটিস এর রোগী কোন ছাড়! ধূমপান ও মদ্যপান সরাসরি রক্তচাপ অস্বাভাবিক করে ফেলে, লিভার-কিডনী ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলে, বিশেষত হাত-পায়ে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে আনে যা নানান রোগ এমনকি বিকলাঙ্গেরও কারণ হতে পারে। এসকল কিছু রক্তে ইনসুলিনের প্রবাহ ও উৎপাদনের স্বাভাবিক মাত্রাকে প্রভাবিত করে যা ডায়বেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলে। তাই ধূমপান ও মদ্যপান যত দ্রুত সম্ভব বর্জন করা উচিত।
নিয়মিত ডায়বেটিস মাপা
নিয়মিত ভায়বেটিস, রক্তচাপ ও সুগার লেভেল মাপা এবং তার রেকর্ড রাখা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই ফলদায়ক একটি পদ্ধতি। এতে করে রোগী কখন, কেন, কি খেলে তাঁর ডায়বেটিস বাড়ে/কমে/নিয়ন্ত্রণে আসে তার ধারণা পেতে পারেন। তাই নিয়মিত ডায়বেটিস মাপা ও তার রেকর্ড রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কামনা করছি। ডায়বেটিস এর রোগীদের খাদ্যাভাস ও জীবন যাপনের নিয়ম-নীতি স্বাভাবিকদের থেকে একটু ভিন্ন এবং তা যথাসম্ভব মেনে চলা উচিত। তা না হলে মৃত্যুঝুঁকি অবধি আছে! আশা করি উল্লেখ্য উপায়গুলি আপনার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।
0 জন কমেন্ট করেছেন
Please read our Comment Policy before commenting.